ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে একটি মাইলফলক হলো "রাজা হরিশচন্দ্র"। এটি ভারতের প্রথম ফিচার ফিল্ম হিসেবে স্বীকৃত, যা ১৯১৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল। ধুন্দিরাজ গোবিন্দ ফালকে, যিনি দাদাসাহেব ফালকে নামে বেশি পরিচিত, এই চলচ্চিত্রটি তৈরি করেছিলেন। তিনি ভারতীয় সিনেমার জনক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই চলচ্চিত্রটি শুধু ভারতের প্রথম ফিচার ফিল্মই নয়, বরং এটি ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
"রাজা হরিশচন্দ্র" একটি মূক চলচ্চিত্র ছিল, অর্থাৎ এতে কোনো ডায়লগ বা শব্দ ছিল না। এটি হিন্দু পুরাণের কাহিনি অবলম্বনে তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে রাজা হরিশচন্দ্রের সততা ও ন্যায়পরায়ণতার গল্প বলা হয়েছে। এই চলচ্চিত্রটি তৈরি করতে ফালকে প্রচুর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেই সময়ে ভারতে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত প্রযুক্তি বা সম্পদ ছিল না। তবুও তিনি তার দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে এই অসাধ্য কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন।
এই চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর বিপুল সাফল্য অর্জন করে। এটি শুধু ভারতেই নয়, বিদেশেও প্রশংসা কুড়িয়েছিল। "রাজা হরিশচন্দ্র" এর সাফল্য ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পকে নতুন দিশা দেখিয়েছিল। এর পর থেকেই ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করতে শুরু করে। দাদাসাহেব ফালকের এই অবদানকে সম্মান জানাতে ভারত সরকার প্রতি বছর চলচ্চিত্র জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার প্রদান করে।
"রাজা হরিশচন্দ্র" শুধু একটি চলচ্চিত্রই নয়, এটি একটি ইতিহাস। এটি ভারতীয় সিনেমার প্রথম পদক্ষেপ, যা আজকের বলিউডের বিশাল সাম্রাজ্যের সূচনা করেছিল। আজ আমরা যে বর্ণিল ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত চলচ্চিত্র দেখছি, তার পেছনে রয়েছে এই ছোট্ট কিন্তু ঐতিহাসিক সূচনা।
ভারতের প্রথম ফিচার ফিল্ম "রাজা হরিশচন্দ্র" শুধু একটি চলচ্চিত্রই নয়, এটি একটি স্বপ্নের শুরু, যা আজও অব্যাহত রয়েছে। দাদাসাহেব ফালকের এই অসামান্য অবদান ভারতীয় সিনেমাকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে।
0 Comments