টেনিস খেলার ইতিহাসে অসংখ্য অবিস্মরণীয় ম্যাচ রয়েছে, কিন্তু 2010 সালের Wimbledon চ্যাম্পিয়নশিপের সেই ম্যাচটি সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল। এটি ছিল টেনিস ইতিহাসের দীর্ঘতম টেনিস ম্যাচ, যা চলেছিল 11 ঘণ্টা 5 মিনিট! এই ম্যাচটি শুধু সময়ের দিক দিয়েই নয়, খেলোয়াড়দের ধৈর্য, মানসিক শক্তি এবং শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা হিসেবেও ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে।
2010 সালের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম রাউন্ডে আমেরিকান খেলোয়াড় 'জন ইসনার' এবং ফরাসি খেলোয়াড় 'নিকোলাস মহুত' মুখোমুখি হন। কেউই তখন জানতেন না যে এই ম্যাচটি টেনিস ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ম্যাচে পরিণত হবে। শুরু থেকেই ম্যাচটি ছিল রোমাঞ্চকর। উভয় খেলোয়াড়ই তাদের সেরা পারফরম্যান্স দিয়ে প্রতিপক্ষকে হারানোর চেষ্টা করছিলেন।
সাধারণ টেনিস ম্যাচে 5সেটের মধ্যে যেকোনো একজন খেলোয়াড় জিতলে ম্যাচ শেষ হয়। কিন্তু এই ম্যাচে 5সেট শেষ হওয়ার পরও কোনো ফলাফল না আসায় ম্যাচটি টাইব্রেকারে যায়। কিন্তু সেখানেও শেষ হয়নি! ম্যাচটি চলতে থাকে একের পর এক গেম নিয়ে। শেষ পর্যন্ত, 5সেটের এই ম্যাচে মোট 183 গেম খেলা হয়, যা টেনিস ইতিহাসে একটি রেকর্ড।
জন ইসনার এবং নিকোলাস মহুত উভয়েই এই ম্যাচে তাদের শারীরিক ও মানসিক সীমা অতিক্রম করেছিলেন। ম্যাচের শেষ দিকে খেলোয়াড়দের ক্লান্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। তারা মাঠে হাঁটতে কষ্ট পাচ্ছিলেন, কিন্তু হার মানেননি। এই ম্যাচটি শুধু টেনিস নয়, সমগ্র ক্রীড়া জগতে ধৈর্য এবং অধ্যবসায়ের এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে।
অবশেষে, 11ঘণ্টা 5 মিনিট পর জন ইসনার এই অবিশ্বাস্য ম্যাচটি জিতেন। ম্যাচের স্কোর ছিল 6–4, 3–6, 6–7(7–9), 7–6(7–3), 70–68। এই ম্যাচটি শুধু একটি রেকর্ডই নয়, এটি টেনিস খেলার নিয়মেও পরিবর্তন আনে। এরপর থেকে উইম্বলডনসহ অন্যান্য গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্টে ফাইনাল সেটে টাইব্রেকার নিয়ম চালু করা হয়, যাতে এমন দীর্ঘ ম্যাচ এড়ানো যায়।
টেনিস ইতিহাসের দীর্ঘতম টেনিস ম্যাচ শুধু একটি খেলা নয়, এটি মানবিক সংগ্রাম এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির এক জীবন্ত উদাহরণ। জন ইসনার এবং নিকোলাস মহুতের এই ম্যাচটি ক্রীড়া প্রেমীদের মনে চিরকাল অমর হয়ে থাকবে। এটি আমাদের শেখায় যে, কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে গেলে কখনো হাল ছাড়া উচিত নয়, এমনকি যদি পথটি দীর্ঘ এবং কঠিনও হয়।
0 Comments